সংবিধান ও রাষ্ট্র কাঠামোতে মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ভোটের অনুপাতে (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা পিআর) সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনসহ একাধিক সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাতে তার বাসভবন ‘যমুনা’য় অনুষ্ঠিত ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। বৈঠকে তিনি বলেন, “সংস্কারের সনদ হলেই দ্রুত নির্বাচন করতে হবে। মৌলিক সংস্কার এড়ানোর সুযোগ নেই।”
প্রেস উইংয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জুলাই সনদ তৈরির প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান রাখতে কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বৈঠক সূত্র জানায়, সংলাপে অচলাবস্থার বিষয়টি তুলে ধরলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ভবিষ্যতে কেউ যেন সংবিধান কাটাছেঁড়া করতে না পারে, এজন্য সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গঠনের বিধান সংবিধানে থাকতে হবে। পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষ গঠন মৌলিক সংস্কারের অংশ।”
ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ করেছে, নির্বাচন কমিশন, দুদক, মানবাধিকার কমিশনের মতো সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হোক, যেখানে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা প্রমুখ থাকবেন। বিএনপি এতে অনাগ্রহী হলেও বেশিরভাগ দল একমত।
এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বিদ্যমান পদ্ধতি নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে না, এটা একটা ধোঁকা। সরাসরি ভোটেই নারী ক্ষমতায়ন সম্ভব।”
কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৫ আগস্ট, এর আগেই জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার তাগিদ দেন প্রধান উপদেষ্টা। এই সনদে নির্ধারিত থাকবে—সংস্কার কীভাবে, কত দিনে, কোন পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে। অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, ৫ আগস্টের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত করার চেষ্টা চলছে।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপে ৮টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং আরও ৭টি বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ সরাসরি সম্প্রচার হওয়ায় জনগণ দেখছে যে আমরা কীভাবে ভবিষ্যতের রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তুলছি। দেশ-বিদেশে এই উদ্যোগ প্রশংসিত হচ্ছে।”