Wednesday, December 10, 2025

কার মৃত্যু কীভাবে হবে তা কি পূর্বনির্ধারিত, নাকি কর্মফলের ওপর নির্ভর করে?

আরও পড়ুন

দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সফর শেষে প্রত্যেককে মৃত্যুর মধ্যদিয়ে অনন্তকালের আবাসস্থলে প্রবেশ করতে হবে। চিরসত্য মৃত্যুকে ঘিরে তাই জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, মৃত্যু তোমাদের পেয়ে বসবেই (পাকরাও করবেই), যদিও তোমরা সুউচ্চ-সুদৃঢ় দুর্গের মধ্যে অবস্থান করো। (সুরা নিসা, আয়াত: ৭৮)

অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং কিয়ামতের দিন তাদের পূর্ণমাত্রায় বিনিময় দেয়া হবে। যে ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করা হলো এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো, অবশ্যই সে ব্যক্তি সফলকাম হলো, কেননা পার্থিব জীবন ছলনার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়। (সুরা ইমরান, আয়াত: ১৮৫)

এ ক্ষেত্রে কার মৃত্যু কখন হবে তা নিয়েও মানুষের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। তবে প্রশ্ন হলো- কার মৃত্যু কীভাবে হবে তা কি পূর্বনির্ধারিত, নাকি কর্মফলের ওপর নির্ভর করে?

ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহর মতে, পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, পাঁচটি জিনিস আছে যেগুলোর জ্ঞান একমাত্র মহান রাব্বুল আলামিন ছাড়া আর কারও নেই। কেউ সেটি সম্পর্কে অগ্রিম বলতে পারবে না। এরমধ্যে একটি হলো মৃত্যু।

আরও পড়ুনঃ  বাকিতে কোরবানির পশু কেনা যাবে?

কার মৃত্যু কখন হবে সেটি পূর্বনির্ধারিত কিনা এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইসলামিক এই স্কলার বলেন, যেহেতু মৃত্যুর ব্যাপারে আল্লাহই সর্বজ্ঞ, সেহেতু অনেকেই প্রশ্ন করেন- আমাদের হায়াত (আয়ুষ্কাল) তাহলে কি নির্ধারিত নাকি ইবাদত করলে হায়াত বাড়ে। এ নিয়ে ইমাম ইবনে কাইয়্যুম রাহিমাহুল্লাহ তার বইয়ে একটি রেওয়াতে উল্লেখ করেছেন।

রেওয়াতটির বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, মহান রাব্বুল আলামিন মানুষের জন্য দুই রকমের হায়াত রেখেছেন। একটি হলো চূড়ান্ত, আরেকটি শর্তযুক্ত। উদাহরণ হিসেবে- একজন মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে হায়াত নির্ধারিত রয়েছে ৫০ বছর। আর শর্তযুক্ত হায়াত আছে আরও ৩০ বছর। তাহলে সবমিলিয়ে ওই ব্যক্তির মোট হায়াত ৮০ বছর। এ ক্ষেত্রে শর্তযুক্ত হায়াতের ব্যাখ্যা হলো- ধরে নেয়া যেতে পারে যে, ওই ব্যক্তি অসুস্থ হলে যদি ওষুধ খায়, ঠিকমতো চিকিৎসা করে বা কোনো নেক আমল করে যার জন্য তার হায়াত নির্দিষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পারে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, চিকিৎসা করানোর ফলে ওই ব্যক্তি আরও ৫ বা ১০ বছর বাঁচল। এমন বিষয়ই মূলত শর্তযুক্ত হায়াত।

আরও পড়ুনঃ  আজকের নামাজের সময়সূচি

শায়খ আহমাদুল্লাহ রেওয়াতটির বর্ণনায় আরও বলেন, যে ফেরেশতাকে আল্লাহ তা’য়ালা সবকিছু লিখার নির্দেশ দেন বা তাগদিরের (ভাগ্য) যিনি লেখক, তিনি কোনো মানুষের তাগদির লিখার সময় আল্লাহ তার যে চূড়ান্ত হায়াত রেখেছেন সেটি লিখেন বা জানেন। কিন্তু যেটি ঝুলন্ত রেখেছেন বা শর্তযুক্ত হায়াত রেখেছেন- সেটি ঠিক কত বছর হবে তা ওই ফেরেশতা জানেন না। এ ক্ষেত্রে শর্ত পূরণ করার উপর সেটি নির্ভর করবে যে একজন ব্যক্তির শর্তযুক্ত হায়াত কতটুকু। উদাহরণ হিসেবে, কারও শর্তযুক্ত হায়াত যদি ৩০ বছর হয় তবে ওই ফেরেশতা জানেন না ৩০ বছরের মধ্যে ঠিক কতটুকু শর্তযুক্ত হায়াত ওই ব্যক্তি পাবে, কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিন সর্বজ্ঞ। তার কাছে কোনোকিছুই অজানা নয়। সুতরাং, মানুষের হায়াত চূড়ান্ত, তবে আমাদের অনেক কর্মের ওপর হায়াতের কিছু অংশ বৃদ্ধি বা কমা নির্ভর করে।

এ কারণে নবীজি (সা.) বিভিন্ন হাদিসে হায়াত বৃদ্ধি ও কমার আমলের কথাও বলেছেন। হাদিসে কর্ম বা আমলের কারণে যে হায়াত বৃদ্ধির কথা এসেছে, এটিই মূলত শর্তযুক্ত হায়াত। যেমন- সহিহ বুখারির একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি চায় তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৫৬০)

আরও পড়ুনঃ  আজকের নামাজের সময়সূচি

তবে মনে রাখতে হবে, হায়াত বেশি বা কম পাওয়ার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। কারণ, এমনও হতে পারে যে- কেউ আমলের কারণে হায়াত পাওয়ার পরও গুনাহ করতে করতেই মারা যেতে পারে। তওবার সুযোগ নাও পেতে পারে। এজন্য নবীজি (সা.) কল্যাণকর হায়াত ও কল্যাণকর মৃত্যু কামনা করার কথা বলেছেন।

আনাস ইবনু মলিক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন- তোমাদের কেউ দুঃখ-দৈন্যে নিপতিত হওয়ার কারণে যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি এমন একটা কিছু করতেই হয়, তাহলে সে যেন বলে হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রাখুন, যতদিন পর্যন্ত আমার জন্য জীবিত থাকা কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দিন তখন, যখন আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫২৬৯; সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫২৬৯)

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ