Thursday, July 17, 2025

‘তুই আওয়ামী লীগ করিস, বাঁচতে হলে টাকা দে’- যুবদলের নেতারা

আরও পড়ুন

রাজধানীর মিরপুরের পশ্চিম মণিপুরে রোববার রাতে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের এক কর্মীর বাসায় হানা দেন ছাত্রদল ও যুবদলের ১০–১৫ জনের একটি দল। সিরাজুল ইসলাম নামে ওই ব্যক্তি একসময় শ্রমিক লীগ করতেন। রাত ১০টায় তার বাসায় ঢুকে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতারা বলেন, ‘তুই আওয়ামী লীগ করিস, আওয়ামী ফ্যাসিস্টের লোক, তোরে পুলিশ ধরাইয়া দেব, বাঁচতে হলে ২০ লাখ টাকা দে।’ এরপর চলতে থাকে তাদের ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকি। অন্যদিকে সিরাজুলের পরিবারের পক্ষ থেকে কাকুতি–মিনতি। রাত তিনটার সময় ওই বাসা থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে বের হন তারা।

রোববার রাতে ঘটনাস্থল থেকে যুবদল ও ছাত্রদলের চারজনকে গ্রেপ্তার করে মিরপুর থানা পুলিশ। চাঁদাবাজির এ ঘটনায় গ্রেপ্তাররা হলেন—মিরপুর থানা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আতিকুর রহমান ওরফে মিন্টু, যুগ্ম আহ্বায়ক তাবিত আহমেদ আনোয়ার ওরফে আনোয়ার হোসেন তাবিত, ওয়ার্ডের যুবদলের সঙ্গে যুক্ত রতন মিয়া ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ইসমাইল হোসেন।

আরও পড়ুনঃ  গাজা থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলো ইসরায়েলে

আজ সোমবার রাতে পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ডিএমপির মিডিয়া শাখা থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাসায় ঢুকে চাঁদাবাজির খবর পেয়ে ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় মিরপুর থানা–পুলিশের একটি দল। তারা এই চাঁদাবাজদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ১৬ হাজার টাকা ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। বাকি টাকা নিয়ে পালিয়ে যান দলের অন্য সদস্যরা।

ঘটনার বিবরণে জাহানারা ইসলামের করা মামলায় বলা হয়, রোববার রাত ১০টার দিকে গ্রেপ্তার করাসহ পলাতক আসামিরা বাসার প্রধান ফটকে এসে কলিংবেল বাজাতে থাকেন। এ সময় পরিচয় জেনে দরজা খুলে দিলে তারা বাসায় ঢুকে সিরাজুল ও তাঁর স্ত্রীকে জিম্মি করেন। তারা সিরাজুলকে ‘তুই আওয়ামী লীগ করিস, আওয়ামী ফ্যাসিস্টের লোক, তোরে পুলিশ দিয়ে ধরাইয়া’ দেব বলে ভয়ভীতি দেখান। তারা সিরাজুলের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা চান। চাঁদা দেওয়া না হলে সিরাজুল ও তার স্ত্রীকে প্রাণে শেষ করে দেবেন বলে ভয়ভীতি দেখান আসামিরা। প্রাণে বাঁচতে তাদের কাছে থাকা ২০ হাজার টাকা আসামিদের হাতে তুলে দেন। এ সময় আসামিরা বাকি টাকা পরিশোধের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। সিরাজুল ও তাঁর স্ত্রী উপায়ান্ত না দেখে ওই বাড়ির চতুর্থ তলার বাসিন্দার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ধার নেন। ওই টাকা পেয়েও আসামিরা বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তখন সিরাজুল তাঁর মোবাইল ব্যাংকিংয়ে থাকা ৩০ হাজার টাকা আসামিদের দিয়ে দেন। এতে তারা শান্ত না হয়ে আরও টাকা চান। এর একপর্যায়ে সিরাজুল ও তাঁর স্ত্রী তাদের ছেলেমেয়ের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা এনে তাদের দেন। রাত তিনটার দিকে আসামিরা পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে বের হচ্ছিলেন। এরইমধ্যে পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এ দেখে আসামিরা দৌড়াদৌড়ি করে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চার আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও অন্যরা পালিয়ে যান।

আরও পড়ুনঃ  এই ৮টি সিনেমার শুটিংয়ে বাস্তবেই সহ*বাস করতে হয়েছে!

এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার ওসি সাজ্জাদ রোমন বলেন, রোববার রাতে মণিপুর এলাকা থেকে তাঁর সরকারি নম্বরে ফোন করে জানানো হয়, পুলিশ পরিচয়ে সিরাজুলের কাছ থেকে চাঁদাবাজি হচ্ছে। এরপরই মিরপুর থানার একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। খবর পেয়ে র‌্যাবও সেখানে পৌঁছায়। তখন ধাওয়া দিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী জাহানারা ইসলাম সকালে বাদী হয়ে গ্রেপ্তার চারজনসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৮-১০ জনকে আসামি করে মিরপুর থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ছাত্রদল ও যুবদলের ওই চার নেতা–কর্মীকে আদালতে তোলা হয়। পরে তাদের কারাগারে পাঠান আদালত।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ